এদিকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজিজুর রহমান একই সাথে দুটি স্কুলে শিক্ষকতা করে বেতন ভাতা গ্রহণ করছেন বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।
জানা যায়, সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার ২নং পশ্চিম জাফলং ইউনিয়নের সাবেক এমপির সেলিম উদ্দিনের প্রতিষ্টিত ‘এড.জেবুন নাহার সেলিম উচ্চ বিদ্যালয়ে’ শিক্ষক নিয়োগে ব্যাপক জালিয়াতি আর দূর্নীতি করেছেন স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোতাল্লেব আহমদ ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজিজুর রহমান। দূর্নীতির পাশাপাশি চলছে স্বজন প্রীতির অভিযোগও।
চলতি বছরের মে মাসে বর্তমান এমপি ইমরান আহমদের সার্বিক সহযোগীতায় উক্ত বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্তির তালিকায় সংযুক্ত হয়। আর এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে বর্তমান বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মিলে লক্ষ-লক্ষ টাকার নিয়োগ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এসব কর্মকান্ডে অতিষ্ট্য হয়ে উক্ত এলাকার সাবেক মেম্বার ও স্কুলের সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জালাল উদ্দিন এসব দুর্ণীতি ও জালিয়াতির বিরুদ্ধে সিলেট জেলা শিক্ষা বোর্ডে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তাদের এসব দূর্নীতির বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে বৃহত্তর কালিজুরি পিরেরবাজার-লাটি এলাকার সর্বস্থরের জনসাধারণ।
স্থানীয়রা জানান, উক্ত বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন থেকে শিক্ষক ও বিভিন্ন পদে কর্মচারি সংকঠ ছিলো। আবার অনেকে ইতি পূর্বে চাকুরি করলে বেসরকারি স্কুল হওয়ায় চাকুরি ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। সম্প্রতি স্কুলটি এমপিও ভুক্ত হওয়ার সাথে-সাথেই শিক্ষকসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগ নিয়ে শুরু হয় সীমাহীন জালিয়াতি ও দুর্নীতি আর স্বজনপ্রীতি। অভিযোগ উঠে গত ৪ মে ২০২০ইং তারিখে অনলাইনের মাধ্যমে ৪ জন শিক্ষককে নিয়োগ নেওয়ার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। কিন্তু বিজ্ঞপ্তির আগে চাকরি প্রার্থী অনেকের সাথে গোপনে মোটা অংকের টাকার চুক্তি করে নেন সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজিজুর রহমান।
বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দুদিন অত্র বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি ও উক্ত ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার জালাল উদ্দিনসহ এলাকাবাসীর কাছে নিয়োগ বানিজ্য ও জালিয়াতির বিষয়টি স্পষ্ট হলে এলাকাবাসীর সর্বসম্মতি ক্রমে জেলা শিক্ষা বোর্ডে একটি লিখিত অভিযোগ করেন জালাল উদ্দিন। ফলে প্রথম নিয়োগ প্রক্রিয়াটি বাধাগ্রস্থ হয়।
এরপর গত ৩১ শে মে পুনরায় আবারও অবৈধ ভাবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে স্কুলের বর্তমান সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজিজুর রহমান জনপ্রতি ১০/১২ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়ে সহকারি শিক্ষক নিয়োগ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এদিকে নিয়োগ প্রক্রিয়াধিন থাকা অবস্থায় ম্যানজিং কমিটির সভাপতি মোতাল্লেব তার আপন ভাগ্না পারভেজ আহমদকে জাল সার্টিফিকেট দিয়ে অফিস সহকারি পদে চাকুরি দিয়েছেন বলে গুঞ্জন শুনা যাচ্ছে। সাথে-সাথে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক আজিজুর রহমানের স্ত্রীকে উক্ত স্কুলের সহকারি শিক্ষক পদে স্থায়ী নিয়োগ দেওয়ার পায়তারা চলছে।
একই ভাবে চাকুরি দেওয়ার নাম করে প্রতাপুর গ্রামের রুবেল নামের জনৈক ব্যক্তির সাথে বড় অংকের টাকার চুক্তি করেন মোতাল্লেব ও আজিজুর, গ্রহণ করেন স্প্রিডমানি।
কিন্তু চাকুরি দিতে না পারায় রুবেলের টাকা ফেরত দিতে হচ্ছে বলে জানান অনেকে। উক্ত বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক পদে চাকুরি দিতে প্রতাপপুর গ্রামের জামিল আহমদের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা উৎকুচ গ্রহন করেন মোতাল্লেব ও আজিজুর। কিন্তু তাকে চাকুরি দিতে না পারায় টাকা গুলো ফিরিয়ে দিতে চলছে বিচার বৈঠক। একই ভাবে স্কুলের কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগে করেন বাণিজ্য। স্থানীয়রা আরো জানান, উক্ত বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজিজুর রহমান একই সাথে তোয়াকুলে একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারি শিক্ষক পদে চাকরি করেন। আবার উক্ত উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
উপরোক্ত বিষয়ে জানতে চাইলে উক্ত বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোতাল্লেব আহমদ বলেন, হ্যা আমাদের স্কুলে শিক্ষক নিয়োগে কিছুটা দূর্নীতি হয়েছিল। আমি তা স্বীকার করি, কিন্তু আমি সহজ সরল মানুষ এসব কিছু বুঝিনা। এসব কাজ করেছেন স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আজিজুর রহমান। সাবেক সভাপতি জালাল উদ্দিনের দেওয়া অভিযোগের বিষয়টি তিনি স্বীকার করে বলেন, তিনি অভিযোগ দিয়েছেন সত্য, বিষয়টি নিয়ে আমি উপজেলা শিক্ষা অফিসারের সাথে যোগাযোগ করেছি।
এদিকে সাবেক সভাপতি জালাল উদ্দিন বলেন, এরা স্কুলটাকে দূর্নীতির আখড়া বানিয়ে ফেলছে, তাই বাধ্য হয়ে এলাকার সর্বসম্মতিক্রমে আমি জেলা শিক্ষা বোর্ডে লিখিত অভিযোগ করেছি। আগামী কাল জানতে পারবো কি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।
অভিযুক্ত শিক্ষক আব্দুল আজিজের কাছে অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাজমুস সাকিব জানান, এ রকম দূর্নীতির একটি অভিযোগ পেয়েছি, এবং অভিযোগটি তদন্তাধিন রয়েছে, অভিযোগ প্রমানিত হলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে